আজ ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাঁচ মাসেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ কিশোরী, দিশেহারা মা

বিশেষ প্রতিনিধি, সাভার (ঢাকা)

সাভারে নিখোঁজের পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও খোঁজ মেলেনি কিশোরীর এতে দিশাহারা হয়ে পরেছে ঐ কিশোরীর মা। নিখোঁজ হওয়ার ১ মাস পর আশুলিয়া থানায় নিখোঁজের জিডি করে চার মাসেও সন্ধান পায়ানি পুলিশ তার। বারবার থানায় যোগাযোগ করলে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে আশুলিয়া থানার এক এস আইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভীত সন্ত্রস্ত নিখোঁজ কিশোরীর মা থানা বিমুখ হয়ে, মেয়েকে খুঁজে পেতে র‍্যাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

গত ১৩ মে শনিবার আশুলিয়ার কাঠালতলা এলাকার আলমগীর হোসেন এর কিশোরী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস আখি (১৭) বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ১২ জুন আশুলিয়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করে ওই কিশোরীর মা সুফিয়া (৩৬) ।
তিন থেকে চার মাস অতিবাহিত হলেও মেয়ের সন্ধান না পেয়ে বারংবার তদন্তে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত আশুলিয়া থানার পুলিশ   এসআই এমদাদুল হকের দারস্থ্য হলে ঘটে বিপত্তি।
কিশোরীর মা সুফিয়া বলেন, ‘গত মে মাসে ১৩ তারিখ দুপুরে আমার মেয়ে বাসা থেকে এক কাপড়ে বের হয়ে যায়, এ সময় আমি ও আমার ছেলে গার্মেন্টসে ছিলাম, বাসা খালি ছিলো। একমাস ধরে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুজি করে মেয়েকে না পেয়ে আশুলিয়া থানায় জিডি করি। এক পর্যায়ে আশুলিয়া থানায় বারংবার মেয়েকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করলে’,  ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই এমদাদুল হক উল্টো আমাকে দোষারোপ করেন মেয়ে হারানোর বিষয়ে।
একদিন রাতের বেলা ফোন করে বলেন এক হাজার টাকা নিয়ে দেখা করতে, আমি রাতের বেলায় আসতে অপারগতা জানিয়ে বলি, স্যার দিনের বেলা এসে আপনার সাথে দেখা করব। এতে মোবাইলেই খারাপ ব্যবহার করেন আমার সাথে। এরপর দুই দিন পর থানায় ওসি স্যারের সাথে দেখা করতে গেলে, এস আই এমদাদ আমার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, বলেন মেয়ে কোথায় আছে তুই  জানোস, মেয়ে বিয়ে দিয়ে জামাইয়ের কাছ থেকে বসে বসে টাকা খাস, আর জামাই ঠেলা দিলে থানায় আসো এ ছাড়া থানায় আসো না, আমি জানি । একথা বলে আমাকে লাঞ্ছিত করে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে থানায়। আমি ওসি স্যারের সাথে দেখা করতে চাইলে আমাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি, থানার অন্যান্য কর্মকর্তারাও আমাকে সাহায্য করেনি, ঐদিন আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি এবং আর কখনো থানায় আসবো না বলে প্রতিজ্ঞা করেছি।
এরপর নিরুপায় হয়ে র‍্যাব-৪ এ একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। র‍্যাবের স্যারেরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি, তারা আমাকে বলেছে মেয়ের খোঁজ পেলে জানাবে।
আমি চাই আমার মেয়েকে দয়া করে জীবিত অথবা মৃত উদ্ধার করে দেন আপনারা। আমি আর পারছিনা চার থেকে পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজছি আমার মেয়েকে। মেয়ে হারানোর বিষয়ে যদি আমি জড়িত থাকি আমার বিচার করুন, তারপরও আমার মেয়েকে উদ্ধার করে দিন।
অভিযোগের ব্যাপারে আশুলিয়া থানার এস আই এমদাদ বলেন, ‘আমি ধারণা করতেছি মেয়েটা হয়তো কারো সাথে সম্পর্ক করে চলে গেছে। যার সাথে গিয়েছে ওই ছেলেটাকে সনাক্ত করতে পারিনি। খারাপ ব্যবহারের বিষয়টি মিথ্যা।’
মেয়েটি কারো সাথে সম্পর্ক করে গিয়েছে বা মেয়ের মা মেয়ের ব্যাপারে জানে, সে বিষয়ে কি নিশ্চিত হতে পেরেছেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে এস আই এমদাদ বলেন, ‘ছেলেটা প্রবাসী তার মেয়ের জামাই, তাদের খরচ টরস দিচ্ছে, আর আমার কেন যেন মনে হচ্ছে মেয়ের মা যানে, তার মেয়ে কোথায় আছে। মেয়ের স্বামী থাকে বিদেশে। সন্ধেহ হয়েছে সে (কিশোরীর মা) হয়তোবা যানে। আমি তাকে সন্দেহ করে (থানায়) এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আপনার মেয়ে কোথায় আছে বলেন, এটা বলাতে সে উত্তেজিত হয়েছে। তার( মেয়ের) মা অবশ্যই কিছু না কিছু জানে আমাদের কাছে হাইড করতেছে। যে ছেলেটা বিদেশ থাকে প্রবাসী স্বামী, তার কাছ থেকে অনেক টাকা পয়সা নিছে তারা, প্রত্যেক মাসে টাকা পাঠায়। মেয়ের মা স্বীকার করেছে তার মেয়ের জামাই টাকা পাঠায় সেই টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে। তার মেয়ে জামাই প্রবাসে থাকে তার মেয়ে বিবাহিত, যতটুকু ধারণা করছি কোন একটা ছেলের সাথে গেছে’।
‘এক হাজার টাকার বিষয়টি কখনো সে প্রমাণ করতে পারবে না, আমি এক হাজার টাকার লোক না, আমি ১ হাজার টাকা দরিদ্র মানুষরে এমনি দেই। আপনার সাথে যদি মেয়ের মায়ের ভালো সম্পর্ক থাকে, তাহলে ভালো কইরা ওরে জিজ্ঞাসা করেন বলেন যে মেয়ে কোথায় আছে বল বের করে আনি‌, থানায় চল বসে একটা সমাধান করে দেই’।
দীর্ঘ চার মাস হয়েছে মেয়ের মা কান্নাকাটি করছে এবং সে জানিনা বলে প্রতিজ্ঞা করছে সে ক্ষেত্রে আপনি কি বলবেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে এই তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ঠিক আছে ভাই আমি বের করতেছি একটু অপেক্ষা করেন ভাই বের করে দিচ্ছি।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap